কিভাবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা যায় ২০২৫
নিজের কোন ফোন হারিয়ে গেলে বা প্রিয়জন বিপদে পড়লে এই ধরনের টুল বা পদ্ধতি সত্যিই কাজে আসে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, গুগল ম্যাপস, Find My Device, বা কিছু নির্দিষ্ট লোকেশন ট্র্যাকিং অ্যাপসের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আইনি দিক এবং ব্যক্তিগত প্রাইভেসির বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি কি জানেন, এই প্রযুক্তি শুধু সুবিধাই দেয় না, বরং ভুল ব্যবহার হলে অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে? এই জন্য, লোকেশন ট্র্যাকিং পদ্ধতি এবং এর সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত জানাতে এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। চলুন, জানি কীভাবে এই প্রক্রিয়াগুলো কাজ করে।
পদ্ধতি ১: Find My Device এবং Google Maps দিয়ে লোকেশন বের করা
সহজ ভাবে বলতে গেলে, Find My Device এবং Google Maps হলো এমন দুটি টুল, যেগুলো দিয়ে আপনার নিজের ডিভাইস বা পরিচিত কারও ডিভাইসের লোকেশন বের করা সম্ভব। তবে এই পদ্ধতি সাধারণত সেই পরিস্থিতিতে বেশি কার্যকর হয়, যখন ফোনটি হারিয়ে যায় বা কোথায় আছে তা নিশ্চিত করা দরকার।
Find My Device:
Find My Device মূলত Google এর একটি ফ্রি সার্ভিস, যা আপনাকে হারিয়ে যাওয়া ফোন বা ডিভাইস খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
- প্রথমে নিশ্চিত করুন, হারিয়ে যাওয়া ফোনে Google Account লগ ইন করা ছিল কিনা।
- তারপর অন্য কোনো ডিভাইস (ল্যাপটপ, মোবাইল) থেকে Google এ গিয়ে "Find My Device" লিখে সার্চ করুন।
- অথবা আপনার ডিভাইসে Find My Device অ্যাপ ইন্সটল করুন।
- অ্যাপটি ওপেন করে সেই Google Account দিয়ে সাইন ইন করুন, যেটি হারানো ফোনে লগ ইন ছিল।
- এবার আপনি দেখতে পাবেন ফোনের বর্তমান লোকেশন ম্যাপে শো করছে।
- ফোন যদি অনলাইনে থাকে, তাহলে "Play Sound," "Secure Device," বা "Erase Device" এর মতো অপশনও ব্যবহার করতে পারবেন।
এই পদ্ধতিতে ফোনের অবস্থান লাইভ ট্র্যাক করা যায়। তবে মনে রাখবেন, Find My Device কাজ করবে তখনই, যখন ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন চালু থাকবে।
Google Maps দিয়ে লোকেশন শেয়ারিং:
এটি বেশ সহজ পদ্ধতি এবং সরাসরি পরিচিত কারও লোকেশন জানার জন্য ভালো সমাধান। নিচের স্টেপগুলো অনুসরণ করুন:
- প্রথমে আপনার ফোনে Google Maps ওপেন করুন।
- স্ক্রিনের উপরে ডান দিকে থাকা আপনার Profile Photo তে ক্লিক করুন।
- এরপর “Location Sharing” অপশন সিলেক্ট করুন।
- "Until you turn this off" অপশন সিলেক্ট করুন, যাতে লোকেশন শেয়ার চালু থাকে যতক্ষণ না আপনি বন্ধ করছেন।
- এবার যার সাথে লোকেশন শেয়ার করতে চান, তার Gmail Address টাইপ করে "Send" করুন।
এক্ষেত্রে, আপনি লাইভ লোকেশন শেয়ার করতে পারবেন এবং যেকোনো সময় এই শেয়ারিং বন্ধও করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, এটি ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট এবং লোকেশন সার্ভিস চালু থাকতে হবে।
পদ্ধতি ২: অ্যাপসের মাধ্যমে লোকেশন বের করা
অনেক অ্যাপও আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি লোকেশন ট্র্যাক করতে পারেন। এই অ্যাপগুলো বেশিরভাগই পারিবারিক সুরক্ষা বা অন্যের ফোনের অবস্থান জানা জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে কিছু জনপ্রিয় অ্যাপের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- Truecaller:
Truecaller অ্যাপ মূলত কলার আইডি দেখানোর জন্য পরিচিত হলেও, এর মাধ্যমে আপনি ফোনের লোকেশনও ট্র্যাক করতে পারেন। এটি একটি ফ্রি অ্যাপ যা আপনার ফোনে ইনস্টল করতে হবে। যখন কোনো অচেনা নাম্বার থেকে কল আসবে, তখন আপনি সেই নাম্বারের সাথে সংযুক্ত লোকেশনও দেখতে পারবেন। তবে, এটি পুরোপুরি সঠিক লোকেশন দেয় না, শুধু ফোনটির প্রাথমিক অবস্থান বা এলাকা জানায়।
- mSpy:
mSpy একটি পেইড অ্যাপ, যা এক ধরনের ট্র্যাকিং সিস্টেম হিসেবে কাজ করে। এটি ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করার জন্য বেশ কার্যকর। আপনি যদি একজন প্যারেন্ট হন এবং আপনার বাচ্চার ফোন ট্র্যাক করতে চান, তবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। mSpy দিয়ে ফোনের GPS লোকেশন লাইভ ট্র্যাক করা সম্ভব, এমনকি আগের লোকেশন হিস্ট্রিও দেখতে পারেন।
mSpy এর মাধ্যমে ফোনের বার্তা, কল লগ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের একটিভিটি সবকিছু মনিটর করা সম্ভব। তবে, এটি শুধুমাত্র legal purposes এ ব্যবহার করা উচিত, না হলে এটি আইনগতভাবে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- Life360:
Life360 অ্যাপটি বেশ জনপ্রিয়, বিশেষত পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে লোকেশন শেয়ারিং করার জন্য। এটি একটি ফ্যামিলি লোকেশন ট্র্যাকিং অ্যাপ। এতে আপনি একটি "Circle" তৈরি করতে পারেন এবং সেই Circle এর সদস্যরা একে অপরের লোকেশন লাইভ ট্র্যাক করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার পরিবারের কোনো সদস্য কোথাও যাচ্ছেন, আপনি তাদের লোকেশন দেখে নিশ্চিত হতে পারবেন। আপনি চাইলে তাদের রাস্তার পরিস্থিতি, ব্যাটারি স্টেটাস, ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
এছাড়া, এই অ্যাপটি আপনাকে আগেই কোনো লোকেশন নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে। যদি কেউ সেই নির্দিষ্ট লোকেশনে পৌঁছানোর পরে আপনাকে জানাতে চায়, তবে আপনি সেই নোটিফিকেশনও পেতে পারবেন।
- Spyic:
Spyic একটি প্রফেশনাল ট্র্যাকিং অ্যাপ, যেটি প্রাথমিকভাবে ফোনের GPS লোকেশন বের করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ফ্যামিলি মেম্বারদের লোকেশন ট্র্যাক করতে বা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মনিটর করতে ব্যবহৃত হতে পারে। Spyic ব্যবহার করে আপনি ফোনের প্রায় সব ধরনের তথ্য যেমন কল লোগ, টেক্সট মেসেজ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিটি ইত্যাদি মনিটর করতে পারবেন।
পদ্ধতি ৩: পুলিশ বা আইনী সংস্থার সাহায্যে লোকেশন বের করা
জরুরি পরিস্থিতিতে যেমন ফোন চুরি হওয়া বা কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার প্রয়োজন হলে, পুলিশের সাহায্য নেয়াই সবচেয়ে ভালো সমাধান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণত আধুনিক টেকনোলজির সাহায্যে মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে থাকে।
GPS ট্র্যাকিং:
প্রথমেই, পুলিশ মোবাইলের GPS লোকেশন ট্র্যাক করার চেষ্টা করে। মোবাইল নাম্বার বা IMEI নম্বর ব্যবহার করে ফোনটি কোন জায়গায় আছে তা নেটওয়ার্ক টাওয়ারের মাধ্যমে ট্র্যাক করা হয়।
সিম ট্র্যাকিং:
মোবাইল সিম সাধারণত নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ফোন কল করা, মেসেজ পাঠানো বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় লোকেশন ডেটা নেটওয়ার্ক কোম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। পুলিশ এই ডেটা ব্যবহার করে ফোনের সর্বশেষ অবস্থান বের করে।
আইনগত অনুমতি:
সাধারণত, ব্যক্তিগত লোকেশন ট্র্যাকিং করা আইনের বাইরে পড়ে এবং এটি অবৈধ। তবে জরুরি অবস্থায়, যেমন হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা বা অপরাধীদের ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে, পুলিশের অনুমতি ও সহযোগিতায় লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষ নিজেরা সরাসরি এই ধরনের ট্র্যাকিং করতে পারে না। তাই যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে পুলিশের সাহায্য নেয়াই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
মোবাইল নম্বার দিয়ে লোকেশন বের করা কি বৈধ?
এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কারণ আমরা যখন কারো মোবাইল নম্বার দিয়ে তার লোকেশন বের করার চেষ্টা করি, তখন প্রাইভেসি এবং আইনগত বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারণভাবে বললে, মোবাইল নম্বার দিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করা আইনত অনুগ্রহযোগ্য হয়ে থাকে যদি তা সঠিক অনুমতি ছাড়া করা হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওপরের পদ্ধতি নাম্বার এক এবং দুই ব্যবহার করা যেতে পারে এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে অন্যের প্রাইভেসি কিংবা লোকেশন জানার জন্য এ ধরনের কার্যকলাপ অবৈধ।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, কারো অনুমতি ছাড়া তার ফোন নম্বর ব্যবহার করে লোকেশন বের করা অবৈধ, কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে তার বৈধ। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায় সেক্ষেত্রে ফাইন্ড মাই ডিভাইস কিংবা অন্যান্য পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে লোকেশন বের করা সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে যদি করতে যান বিনা অনুমতিতে সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের কার্যকলাপ অবৈধ।
ফোন নম্বরের লোকেশন হিস্ট্রি কিভাবে বের করব?
এখন প্রশ্ন হল, যদি আপনি কোনো ফোন নম্বারের লোকেশন হিস্ট্রি বের করতে চান, তাহলে কি কীভাবে সেটি করা সম্ভব?
ফোনের লোকেশন হিস্ট্রি বের করা এমন একটি কাজ যা বেশ কিছু অ্যাপ বা সার্ভিসের মাধ্যমে করা সম্ভব, তবে তা শুধুমাত্র আপনার ফোনের তথ্য বা আপনার পরিচিত কাউকে যদি আপনি অনুমতি দেন। এজন্য প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে ফোনের লোকেশন হিস্ট্রি সাধারণত Google Account বা অন্য সার্ভিসের মাধ্যমে ট্র্যাক করা হয়।
গুগল লোকেশন হিস্ট্রি:
- যদি আপনি গুগল ব্যবহারকারী হন, তাহলে আপনি আপনার Google Maps অ্যাপের মাধ্যমে আপনার লোকেশন হিস্ট্রি চেক করতে পারেন।
- প্রথমে, আপনার ফোনে Google Maps খুলুন।
- তারপর স্ক্রিনের বাম পাশে থাকা Menu (three horizontal lines) এ ক্লিক করুন এবং "Your Timeline" অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- আপনি সেখানে দেখতে পাবেন, কতদিন আগে কোথায় গিয়েছেন, কোন সময়টায় কোথায় ছিলেন। এটি Google-এর Location History ফিচারের মাধ্যমে কাজ করে।
এছাড়া, আপনি যদি iPhone ব্যবহারকারী হন, তবে Apple’s Find My app এর মাধ্যমে আপনার ফোনের লোকেশন হিস্ট্রি চেক করতে পারবেন। তবে এটি শুধুমাত্র তখন কাজ করবে, যখন আপনার iCloud একাউন্টটি ফোনের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং লোকেশন শেয়ারিং চালু থাকবে।
উপসংহার
সহজ ভাবে বলতে গেলে, মোবাইল নম্বর দিয়ে লোকেশন বের করা সম্ভব, তবে এটি সবসময় অনুমোদিত উপায়ে এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজনেই করা উচিত। গুগল ম্যাপস, Find My Device, এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় বৈধভাবে লোকেশন ট্র্যাক করা যায়। তবে ভুল উদ্দেশ্যে বা বেআইনিভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। আপনার যদি এই বিষয়ে আরও কিছু জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো একবার ঘুরে দেখুন। নিশ্চয়ই আপনার কাজে লাগবে!