১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? by Tech Blog Zone

 

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

বর্তমান সময়ে ভ্রমণ করা যতটা সহজ হয়েছে, তেমনি ভিসা এবং পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। এক্ষেত্রে, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট একটি  বড় ভূমিকা রেখেছে বা  গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে  বলা যেতে পারে । বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট নবায়নের ঝামেলা কমাতে অনেকেই ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের দিকে ঝুঁকছেন।  কিন্তু বেশিরভাগ উনি জানেন না যে

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য কী কী লাগে?

এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো এই ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। সঠিক তথ্য জানা থাকলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া হবে আরও সহজ এবং ঝামেলাহীন। এখনই জেনে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো, যা আপনার ই-পাসপোর্ট আবেদনকে করবে আরও সোজা এবং সুবিধাজনক।

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের সুবিধা কি কি?


ই-পাসপোর্টের ১০ বছর মেয়াদি ভার্সন অনেক বেনিফিট নিয়ে এসেছে। 

  • প্রথমত, এর লং-টার্ম ভ্যালিডিটি। ৫ বছরের পাসপোর্টের তুলনায় এটি দ্বিগুণ সময় চলে, যা রিনিউয়াল প্রসেসের হ্যাসেল কমিয়ে দেয়। 
  • দ্বিতীয়ত, ফাস্ট প্রসেসিং। অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম এবং এফিশিয়েন্ট প্রসেসিং ব্যবস্থা পাসপোর্ট পাওয়ার সময় কমিয়ে দেয়। 
  • তৃতীয়ত, মডার্ন টেকনোলজি। অত্যাধুনিক সিকিউরিটি ফিচার ফ্রড প্রিভেনশনে হেল্প করে। 
  • চতুর্থত, ভিসা ফ্যাসিলিটি। কিছু কান্ট্রিতে ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়াও, লং-টার্ম ভ্যালিডিটি ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেলারদের জন্য খুবই কনভিনিয়েন্ট।

এছাড়াও, লং-টার্ম ভ্যালিডিটি ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেলারদের জন্য খুবই কনভিনিয়েন্ট ।সামগ্রিকভাবে, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট ট্রাভেল এক্সপেরিয়েন্সকে আরও সহজ ও স্মুথ করে তোলে।


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন করা যায়?

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস বেশ সিম্পল। প্রথমে, https://epassport.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে "নতুন আবেদন" অপশনে ক্লিক করে ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। পার্সোনাল ইনফরমেশন, কন্টাক্ট ডিটেইলস, এবং অন্যান্য রিকোয়ার্ড ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। তারপর পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করতে হবে, যেখানে "১০ বছর মেয়াদি" অপশন চুজ করতে হবে। নেক্সট স্টেপে, রিকোয়ার্ড ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। এরপর পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করে ফি পে করতে হবে। ফাইনালি, কনফার্মেশন পেজ প্রিন্ট করে রাখতে হবে। এই প্রিন্টেড কপি নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে ভেরিফিকেশন ও বায়োমেট্রিক ডাটা কালেকশনের জন্য যেতে হবে। এভাবে অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস কমপ্লিট হবে।

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ফি কত এবং কিভাবে পেমেন্ট করা যায়?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ফি হলো ৫৭৫০ টাকা। এই ফি পেমেন্টের জন্য মাল্টিপল অপশন আছে। অনলাইন পেমেন্ট মেথড হিসেবে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) ব্যবহার করা যায়। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে গিয়েও পেমেন্ট করা যায়। অনলাইনে আবেদন করার সময় পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করতে হয়।


ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং সিলেক্ট করলে সরাসরি পেমেন্ট গেটওয়েতে রিডাইরেক্ট হয়। সোনালী ব্যাংক অপশন সিলেক্ট করলে একটি চালান ফর্ম জেনারেট হয়, যা প্রিন্ট করে ব্যাংকে গিয়ে পেমেন্ট করতে হয়। পেমেন্ট কমপ্লিট হলে একটি ট্রানজেকশন আইডি পাওয়া যায়, যা পরবর্তীতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়।



১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য কিছু এসেনশিয়াল ডকুমেন্ট রিকোয়ার্ড। প্রাইমারি ডকুমেন্টস হলো: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম সনদ, সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ফটো (নীল ব্যাকগ্রাউন্ড), এবং পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার রসিদ। এছাড়াও কিছু অতিরিক্ত ডকুমেন্ট লাগতে পারে,


যেমন: পূর্ববর্তী পাসপোর্ট (যদি থাকে), প্রফেশনাল সার্টিফিকেট, ম্যারেজ সার্টিফিকেট (বিবাহিতদের ক্ষেত্রে), পেরেন্টস এনআইডি (ছোটদের ক্ষেত্রে), গার্ডিয়ানের এনআইডি ও কনসেন্ট লেটার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। সব ডকুমেন্টের ফটোকপি A4 সাইজে এবং ক্লিয়ার হওয়া জরুরি। ইনকমপ্লিট বা ইনকারেক্ট ডকুমেন্টেশন অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস ডিলে করতে পারে।


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য কি কি বাধ্যতামূলক যোগ্যতা লাগে?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য প্রাইমারি এলিজিবিলিটি ক্রাইটেরিয়া বা প্রধান শর্ত হলো বাংলাদেশি  নাগরিক হওয়া বা  বাংলাদেশী সিটিজেনশিপ। অ্যাপ্লিকেন্টকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। এছাড়াও, ভ্যালিড জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকা আবশ্যক। যদি কেউ ১৮ বছরের নিচে হয়, তাহলে তার পেরেন্টস বা লিগাল গার্ডিয়ানের এনআইডি লাগবে।


অ্যাপ্লিকেন্টের বয়স কমপক্ষে ১৫ দিন হতে হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলেও আবেদন করা যায়, তবে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডকুমেন্টেশন লাগতে পারে। কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকলে তা পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। সামগ্রিকভাবে, যেকোনো বয়সের বাংলাদেশি নাগরিক, যার ভ্যালিড এনআইডি আছে, তিনি ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।



১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ডেলিভারি টাইম কত?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ডেলিভারি টাইম ডিপেন্ড করে অ্যাপ্লিকেশন টাইপের উপর। সাধারণত তিন ধরনের সার্ভিস অফার করা হয়: রেগুলার, এক্সপ্রেস, এবং সুপার এক্সপ্রেস। রেগুলার সার্ভিসে সাধারণত ২১ ওয়ার্কিং ডে লাগে। এক্সপ্রেস সার্ভিসে ৭-১০ ওয়ার্কিং ডে লাগে, আর সুপার এক্সপ্রেস সার্ভিসে মাত্র ২-৩ ওয়ার্কিং ডে লাগে। তবে এই টাইমলাইন অফিশিয়াল এবং বাস্তবে কিছুটা ভ্যারি করতে পারে।


যেমন, ভেরিফিকেশন প্রসেসে কোনো ইস্যু থাকলে বা অতিরিক্ত ডকুমেন্ট লাগলে সময় বেশি লাগতে পারে। অন্যদিকে, সব কিছু পারফেক্ট থাকলে আগেও পাওয়া যেতে পারে। অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যাটাস অনলাইনে ট্র্যাক করা যায়, যা থেকে আপডেটেড ডেলিভারি টাইম জানা যায়।



১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ফটো স্পেসিফিকেশন কি?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ফটো স্পেসিফিকেশন খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। পাসপোর্ট ফটো হতে হবে সাম্প্রতিক তোলা, সাদা কাগজে প্রিন্ট করা, সাইজ ৪৫ মিলিমিটার (উচ্চতা) x ৩৫ মিলিমিটার (প্রস্থ)। ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই হালকা নীল রঙের হতে হবে। ফটোতে মুখের এক্সপ্রেশন ন্যাচারাল হতে হবে, সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এবং চোখ খোলা রাখতে হবে।


চশমা পরা থাকলে চোখ পরিষ্কারভাবে দেখা যেতে হবে, কালো চশমা চলবে না। ধর্মীয় কারণে মাথা ঢাকা থাকলে মুখমণ্ডল পুরোপুরি দেখা যেতে হবে। ফটোর কোয়ালিটি হাই রেজোলিউশনের হতে হবে, মিনিমাম ৬০০ ডিপিআই। ফটোশপ বা অন্য কোনো ইমেজ এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে এডিট করা চলবে না। সঠিক স্পেসিফিকেশন মেনে ফটো না দিলে অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট হতে পারে, তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।



১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য কি কি?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের বেশ কিছু ইউনিক ফিচার রয়েছে।

  • প্রথমত, এতে রয়েছে একটি এম্বেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোচিপ, যা হোল্ডারের বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন স্টোর করে। এই চিপে থাকে ডিজিটাল সিগনেচার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস রিকগনিশন ডাটা। 
  • দ্বিতীয়ত, এর পেজগুলো স্পেশাল সিকিউরিটি পেপার দিয়ে তৈরি, যা জাল করা কঠিন। 
  • তৃতীয়ত, এতে থাকে মাল্টিপল লেয়ার অফ সিকিউরিটি ফিচার যেমন - ওয়াটারমার্ক, অপটিক্যাল ভেরিয়েবল ডিভাইস (ওভিডি), থ্রিডি ইমেজ। 
  • চতুর্থত, এর ডাটা পেজে থাকে লেজার এনগ্রেভড পার্সোনাল ইনফরমেশন। 
  • পঞ্চমত, এতে রয়েছে মাল্টিপল বায়োমেট্রিক ফিচার যা আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশনে হেল্প করে। এসব ফিচার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টকে অত্যন্ত সিকিউর ও রিলায়েবল ডকুমেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রসেস কি?


১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ। এই প্রসেস অ্যাপ্লিকেন্টের প্রদত্ত ঠিকানা ও পার্সোনাল ইনফরমেশন যাচাই করে। সাধারণত অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিকোয়েস্ট যায়। লোকাল পুলিশ স্টেশন থেকে একজন অফিসার হোম ভিজিট করেন। তিনি অ্যাপ্লিকেন্টের বর্তমান ঠিকানা, পেশা, পারিবারিক তথ্য ইত্যাদি যাচাই করেন।


এছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও ইনফরমেশন নেন। কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কিনা তাও চেক করা হয়। পুলিশ রিপোর্ট পজিটিভ হলে পাসপোর্ট ইস্যু প্রসেস এগিয়ে যায়। নেগেটিভ হলে অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট হতে পারে। অ্যাপ্লিকেন্টের দেয়া তথ্য সঠিক হলে এই প্রসেস দ্রুত শেষ হয়।



উপসংহার


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে  এই এই বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। আর এই আর্টিকেলে আমরা মূলত আলোচনা করেছি, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে হলে, আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম সনদ, সাম্প্রতিক ছবি (নীল ব্যাকগ্রাউন্ড সহ), এবং পাসপোর্ট ফি রসিদ জমা দিতে হবে।


এছাড়াও পূর্ববর্তী পাসপোর্ট, পেশাগত সনদপত্র, বিবাহ সনদ, এবং গার্জিয়ানের এনআইডি ও সম্মতিপত্র প্রয়োজন হতে পারে। কাগজপত্রের ফটোকপি পরিষ্কার ও A4 আকারে থাকতে হবে। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আরও বিস্তারিত জানতে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url